skip to main | skip to sidebar

বাংলাদেশের কবিতা

এই ব্লগটি সন্ধান করুন


শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

অস্তচাঁদে - জীবনানন্দ দাস

ভালোবাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষপ্রহরের শশী!
-অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে যবে কালো নদী-ঢেউয়ের কলসী,
নিঝ্ঝুম বিছানার পরে
মেঘবৌ’র খোঁপাখসা জোছনাফুল চুপে চুপে ঝরে,-
চেয়ে থাকি চোখ তুলে’-যেন মোর পলাতকা প্রিয়া
মেঘের ঘোমটা তুলে’ প্রেত-চাঁদে সচকিতে ওঠে শিহরিয়া!
সে যেন দেখেছে মোরে জন্মে জন্মে ফিরে’ ফিরে’ ফিরে’
মাঠে ঘাটে একা একা, -বুনোহাঁস-জোনাকির ভিড়ে!
দুশ্চর দেউলে কোন্-কোন্ যক্ষ-প্রাসাদের তটে,
দূর উর-ব্যাবিলোন-মিশরের মরুভূ-সঙ্কটে,
কোথা পিরামিড তলে, ঈসিসের বেদিকার মূলে,
কেউটের মতো নীলা যেইখানে ফণা তুলে উঠিয়াছে ফুলে,
কোন্ মনভুলানিয়া পথচাওয়া দুলালীর মনে
আমারে দেখেছে জোছনা-চোর চোখে-অলস নয়নে!
আমারে দেখেছে সে যে আসরীয় সম্রাটের বেশে
প্রাসাদ-অলিন্দে যবে মহিমায় দাঁড়ায়েছি এসে-
হাতে তার হাত, পায়ে হাতিয়ার রাখি
কুমারীর পানে আমি তুলিয়াছি আনন্দের আরক্তিম আঁখি!
ভোরগেলাসের সুরা-তহুরা, ক’রেছি মোরা চুপে চুপে পান,
চকোরজুড়ির মতো কুহরিয়া গাহিয়াছি চাঁদিনীর গান!
পেয়ালায়-পায়েলায় সেই নিশি হয় নি উতলা,
নীল নিচোলের কোলে নাচে নাই আকাশের তলা!
নটীরা ঘুমায়েছিল পুরে পুরে, ঘুমের রাজবধূ-
চুরি করে পিয়েছিনু ক্রীতদাসী বালিকার যৌবনের মধু!
সম্রাজ্ঞীর নির্দয় আঁখির দর্প বিদ্রূপ ভুলিয়া
কৃষ্ণাতিথি-চাঁদিনীর তলে আমি ষোড়শীর উরু পরশিয়া
লভেছিনু উল্লাস-উতরোল!-আজ পড়ে মনে
সাধ-বিষাদের খেদ কত জন্মজন্মান্তের, রাতের নির্জনে!

আমি ছিনু ‘ক্রবেদুর’ কোন্ দূর ‘প্রভেন্স্’-প্রান্তরে!
-দেউলিয়া পায়দল্-অগোচর মনচোর-মানিনীর তরে
সারেঙের সুর মোর এমনি উদাস রাত্রে উঠিত ঝঙ্কারি!
আঙুরতলায় ঘেরা ঘুমঘোর ঘরখানা ছাড়ি
ঘুঘুর পাখনা মেলি মোর পানে আসিল পিয়ারা;
মেঘের ময়ূরপাখে জেগেছিল এলোমেলো তারা!
-’অলিভ’ পাতার ফাঁকে চুন চোখে চেয়েছিল চাঁদ,
মিলননিশার শেষে-বৃশ্চিক, গোক্ষুরাফণা, বিষের বিস্বাদ!

স্পেইনের ‘সিয়েরা’য় ছিনু আমি দস্যু-অশ্বারোহী-
নির্মম-কৃতান্ত-কাল-তবু কী যে কাতর, বিরহী!
কোন্ রাজনন্দিনীর ঠোঁটে আমি এঁকেছিনু বর্বর চুম্বন!
অন্দরে পশিয়াছিনু অবেলার ঝড়ের মতন!
তখন রতনশেজে গিয়েছিল নিভে মধুরাতি,
নীল জানালার পাশে-ভাঙা হাটে-চাঁদের বেসাতি।
চুপে চুপে মুখে কার পড়েছিনু ঝুঁকে!
ব্যাধের মতন আমি টেনেছিনু বুকে
কোন্ ভীরু কপোতীর উড়ু-উড়ু ডানা!
-কালো মেঘে কেঁদেছিল অস্তচাঁদ-আলোর মোহানা!

বাংলার মাঠে ঘাটে ফিরেছিনু বেণু হাতে একা,
গঙ্গার তীরে কবে কার সাথে হয়েছিল দেখা!
‘ফুলটি ফুটিলে চাঁদিনী উঠিলে’ এমনই রূপালি রাতে
কদমতলায় দাঁড়াতাম গিয়ে বাঁশের বাঁশিটি হাতে!
অপরাজিতার ঝাড়ে- নদীপারে কিশোরী লুকায়ে বুঝি!-
মদনমোহন নয়ন আমার পেয়েছিল তারে খুঁজি!
তারই লাগি বেঁধেছিনু বাঁকা চুলে ময়ূরপাখার চূড়া,
তাহারই লাগিয়া শুঁড়ি সেজেছিনু-ঢেলে দিয়েছিনু সুরা!
তাহারই নধর অধর নিঙাড়ি উথলিল বুকে মধু,
জোনাকির সাথে ভেসে শেষরাতে দাঁড়াতাম দোরে বঁধু!
মনে পড়ে কি তা!-চাঁদ জানে যাহা, জানে যা কৃষ্ণাতিথির শশী,
বুকের আগুনে খুন চড়ে-মুখ চুন হয়ে যায় একেলা বসি!
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:৩৬ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

অন্ধকার - জীবনানন্দ দাস

গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার;
তাকিয়ে দেখলাম পান্ডুর চাঁদ বৈতরণীর থেকে তার অর্ধেক ছায়া
গুটিয়ে নিয়েছে যেন
কীর্তিনাশার দিকে।

ধারসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়েছিলাম পউষের রাতে-
কোনোদিন আর জাগব না জেনে
কোনোদিন জাগব না আমি কোনোদিন জাগব না আর-

হে নীল কস্তুরী আভার চাঁদ
তুমি দিনের আলো নও, স্বপ্ন নও,
হৃদয়ে যে মৃত্যুর শান্তি ও স্থিরতা রয়েছে,
রয়েছে যে অগাধ ঘুম
সে-আস্বাদ নষ্ট করবার মতো শেলতীব্রতা তোমার নেই,
তুমি প্রদাহ প্রবহমান যন্ত্রণা নও-
জানো না কি চাঁদ
জানো না কি নিশীথে,
আমি অনেক দিন-
অনেক অনেক দিন
অন্ধকারের সারাৎসারে অন্তত মৃত্যুর মতো মিশে থেকে
হঠাৎ ভোরের আলোর মূর্খ উচ্ছ্বাসে নিজেকে পৃথিবীর জীব বলে
বুঝতে পেরেছি আবার;
ভয় পেয়েছি,
পেয়েছি অসীম দুর্নিবার বেদনা;
দেখেছি রক্তিম আকাশে সূর্য জেগে উঠে
মানুষিক সৈনিক সেজে পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য
আমাকে নির্দেশ দিয়েছে;
আমার সমস্ত হৃদয় ঘৃণায় বেদনায় আক্রোশে ভরে গিয়েছে;
সূর্যের রৌদ্রে আক্রান্ত এই পৃথিবী যেন কোটি কোটি শুয়োরের আর্তনাদে
উৎসব শুরু করেছে।
হায়, উৎসব!
হৃদয়ের অবিরল অন্ধকারের ভিতর সূর্যকে ডুবিয়ে ফেলে
আবার ঘুমোতে চেয়েছি আমি,
অন্ধকারের স্তনের যোনির ভিতর অনন্ত মৃত্যুর মতো মিশে
থাকতে চেয়েছি।
কোনোদিন মানুষ ছিলাম না আমি।
হে নর, হে নারী।
তোমাদের পৃথিবীকে চিনিনি কোনোদিন;
আমি অন্য কোনো নক্ষত্রের জীব নই।
যেখানে স্পন্দন, সংঘর্ষ, গতি, যেখানে উদ্যম, চিন্তা, কাজ
সেখানেই সূর্য, পৃথিবীর, বৃহস্পতি, কালপুরুষ, অনন্ত আকাশগ্রন্থি,
শত শত শূকরের চিৎকার সেখানে,
শত শত শূকরীর প্রসববেদনার আড়ম্বর;
এই সব ভয়াবহ আরতি!
গভীর অন্ধকারের ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত;
আমাকে কেন জাগাতে চাও?
হে সময়গ্রন্থি, হে সূর্য, হে মাঘনিশীথের কোকিল, হে স্মৃতি, হে হিম হাওয়া
আমাকে জাগাতে চাও কেন।
অরব অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠব না আর;
তাকিয়ে দেখব না নির্জন বিমিশ্র চাঁদ বৈতরণীর থেকে
অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে
কীর্তিনাশার দিকে।
ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়ে থাকব-ধীরে-পউষের রাতে।
কোনদিন জাগব না জেনে-

কোনোদিন জাগব না আমি-কোনোদিন আর।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:৩৫ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

সুদর্শনা - জীবনানন্দ দাস

একদিন ম্লান হেসে আমি
তোমার মতন এক মহিলার কাছে
যুগের সঞ্চিত পণ্যে লীন হতে গিয়ে
অগ্নিপরিধির মাঝে সহসা দাঁড়িয়ে
শুনেছি কিন্নরকন্ঠ দেবদারু গাছে,
দেখেছ অমৃতসূর্য আছে।

সবচেয়ে আকাশ নক্ষত্র ঘাস চন্দ্রমল্লিকার রাত্রি ভালো,ত
তবুও সময় স্থির নয়,
আরেক গভীরতর শেষ রূপ চেয়ে
দেখেছে সে তোমার বলয়।

এই পৃথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন
তোমার শরীর; তুমি দান করো নি তো;
সময় তোমাকে সব দান করে মৃতদার ব’লে
সুদর্শনা, তুমি আজ মৃত।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:৩৩ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

সুরঞ্জনা - জীবনানন্দ দাস

সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো;
পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন;
কালো চোখ মেলে ওই নীলিমা দেখেছ;
গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন
শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা-নগরীরর গায়ে
কী চেয়েছে? কী পেয়েছে — গিয়েছে হারায়ে।

বয়স বেড়েছে ঢের নরনারীদের,
ঈষৎ নিভেছে সূর্য নক্ষত্রের আলো;
তবুও সমুদ্র নীল: ঝিনুকের গায়ে আলপনা;
একটি পাখির গান কী রকম ভালো।
মানুষ কাউকে চায় — তার সেই নিহত উজ্জ্বল
ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্য কোন সাধনার ফল।

মনে পড়ে কবে এক তারাভরা রাতের বাতাসে
ধর্মাশোকের ছেলে মহেন্দ্রের সাথে
উতরোল বড় সাগরের পথে অস্তিম আকাঙ্কা নিয়ে প্রাণে
তবুও কাউকে আমি পারিনি বোঝাতে
সেই ইচ্ছা সঙ্ঘ নয় শক্তি নয় কর্মীদের সুধীদের বিবর্ণতা নয়,
আরো আলো: মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়।

যেন সব অন্ধকার সমুদ্রের ক্লান্ত নাবিকেরা।
মক্ষিকার গুঞ্জনের মতো এক বিহ্বল বাতাসে
ভূমধ্যসারলীন দূর এক সভ্যতার থেকে
আজকের নব সভ্যতায় ফিরে আসে;–
তুমি সেই অপরূপ সিন্ধু রাত্রি মৃতদের রোল
দেহ দিয়ে ভালোবেসে, তবু আজ ভোরের কল্লোল।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:৩০ AM ৬টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

কুড়ি বছর পরে - জীবনানন্দ দাস

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে
কার্তিকের মাসে-
তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে-তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়-মাঠের ভিতরে!

অথবা নাইকো ধান ক্ষেতে আর,
ব্যস্ততা নাইকো আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে খড়
পাখির নীড়ের থেকে খড়
ছড়াতেছে; মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল!

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুঁড়ি কুঁড়ি, বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!

হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু-সরু কালো কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের,
ঝাউয়ের-আমের;
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে!

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!

তখন হয়তো মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাঁকে
কোথায় লুকায় আপনাকে!
চোখের পাতার মতো নেমে চুপি চিলের ডানা থামে-

সোনালি সোনালি চিল-শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:২৭ AM 1 টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

হায় পাখি, একদিন কালীদহে ছিল না কি - জীবনানন্দ দাস

হায় পাখি, একদিন কালীদহে ছিল না কি – দহের বাতাসে
আষাঢ়ের দু’পহরে কলরব কর নি কি এই বাংলায়!
আজ সারাদিন এই বাদলের কোলাহলে মেঘের ছায়ায়
চাঁদ সদাগর: তার মধুকর ডিঙাটির কথা মনে আসে,
কালীদহে কবে তারা পড়েছিলো একদিন ঝড়ের আকাশে,-
সেদিনো অসংখ্য পাখি উড়েছিলো না কি কালো বাতাসের গায়,
আজ সারাদিন এই বাদলের জলে ধলেশ্বরীর চরায়
গাংশালিখের ঝাঁক, মনে হয়, যেন সেই কালীদহে ভাসে;

এই সব পাখিগুলো কিছুতেই আজিকার নয় যেন-নয়-
এ নদীও ধলেশ্বরী নয় যেন-এ আকাশ নয় আজিকার:
ফণীমনসার বনে মনসা রয়েছে নাকি? আছে; মনে হয়,
এ নদী কি কালীদহ নয়? আহা, ঐ ঘাটে এলানো খোঁপার
সনকার মুখ আমি দেখি না কি? বিষন্ন মলিন ক্লান- কি যে
সত্য সব; তোমার এ স্বপ্ন সত্য, মনসা বলিয়া গেল নিজে।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:২২ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি - জীবনানন্দ দাস

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলার একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চরায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:২০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

আবার আসিব ফিরে - জীবনানন্দ দাস

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব — কিশোরীর — ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা রায় — রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে –

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:১৮ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

অদ্ভুত আঁধার এক - জীবনানন্দ দাস

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:১৫ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

বোধ - জীবনানন্দ দাস

আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে!
কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে
সহজ লোকের মতো! তাদের মতন ভাষা কথা
কে বলিতে পারে আর! — কোন নিশ্চয়তা
কে জানিতে পারে আর? — শরীরের স্বাদ
কে বুঝিতে চায় আর? — প্রাণের আহ্লাদ
সকল লোকের মতো কে পাবে আবার!
সকল লোকের মতো বীজ বুনে আর
স্বাদ কই! — ফসলের আকাঙক্ষায় থেকে,
শরীরে মাটির গন্ধ মেখে,
শরীরে জলের গন্ধ মেখে,
উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে
চাষার মতণ প্রাণ পেয়ে
কে আর রহিবে জেগে পৃথিবীর পরে?
স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়,কোন এক বোধ কাজ করে
মাথার ভিতরে!

পথে চলে পারে — পারাপারে
উপেক্ষা করিতে চাই তারে:
মড়ার খুলির মতো ধ’রে
আছাড় মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
তবু সে মাথার চারি পাশে!
তবু সে চোখের চারি পাশে!
তবু সে বুকের চারি পাশে!
আমি চলি, সাথে সাথে সেও চলে আসে!

আমি থামি —
সেও থেমে যায়;

সকল লোকের মাঝে বসে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?
জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হয়ে —
সন্তানের জন্ম দিতে দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের ; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে আসিতেছে চলে
জন্ম দেবে — জন্ম দেবে বলে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি? — তাহাদের মন
আমার মনের মতো না কি?
–তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী!

হাতে তুলে দেখি নি কি চাষার লাঙল?
বালটিকে টানি নি কি জল?
কাস্তে হাতে কতবার যাই নি কি মাঠে?
মেছোদের মতো আমি কত নদী ঘাটে
ঘুরিয়াছি;
পুকুরের পানা শ্যালা — আঁষটে গায়ের ঘ্রাণ গায়ে
গিয়েছে জড়ায়ে;
–এই সব স্বাদ
–এ সব পেয়েছি আমি — বাতাসের মতন অবাধ
বয়েছে জীবন,
নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
একদিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন — অবাধ — অগাধ;
চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে —
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমার সে ভালোবাসিয়াছে,
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা করে চলে গেছে — যখন ডেকেছি বারেবারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন — এই ভালোবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি; যে নক্ষত্র — নক্ষত্রের দোষে
আমার প্রেমের পথে বারবার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা — ধুলো আর কাদা — ।

মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয় — প্রেম নয় — কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতার ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়?
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি? পাবে না আহ্লাদ
মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন!
মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন!
শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!

এই বোধ — শুধু এই স্বাদ
পায় সে কি অগাধ — অগাধ!
পৃথিবীর পথ ছেড়ে আকাশের নক্ষত্রের পথ
চায় না সে? করেছে শপথ
দেখিবে সে মানুষের মুখ?
দেখিবে সে মানুষীর মুখ?
দেখিবে সে শিশুদের মুখ?
চোখে কালোশিরার অসুখ,
কানে যেই বধিরতা আছে,
যেই কুঁজ — গলগন্ড মাংসে ফলিয়াছে
নষ্ট শসা — পচা চালকুমড়ার ছাঁচে,
যে সব হৃদয়ে ফলিয়াছে
— সেই সব।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:১০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

পঁচিশ বছর পরে (মাঠের গল্প) - জীবনানন্দ দাস

শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!’
এই বলে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে মাঠে মরে গেল, ইদুর — পেচাঁরা
জোছনায় ধানক্ষেতে খুঁজে
এল-গেল। –চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বায়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত-কেউ! — রহিলাম জেগে
আমি একা — নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশে
তার চেয়ে আগে চলে আসে
যদিও সময়–
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয়!–

তারপর — একদিন
আবার হলদে তৃণ
ভরে আছে মাঠে- -
পাতায় শুকনো ডাঁটে
ভাসিছে কুয়াশা
দিকে দিকে, চুড়ায়ের ভাঙা বাসা
শিশিরে গিয়েছে ভিজে — পথের উপর
পাখির ডিমের খোলা, ঠান্ডা-কড়কড়!
শসাফুল — দু-একটা নষ্ট শাদা শসা
মাকড়ের ছেঁড়া জাল, শুকনো মাকড়সা
লতায় — পাতায়;
ফুটফুটে জোছনারাতে পথ চেনা যায়;
দেখা যায় কয়েকটা তারা
হিম আকাশের গায় — ইদুর পেঁচারা
ঘুরে যায় মাঠে মাঠে, ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজও মেটে,
পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে!

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:০৭ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? - শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।

এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়

যেতে পারি
যে-কোনপ দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?

সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:০৩ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

পঁচিশে বৈশাখ - রূপক চক্রবর্তী

তখন আমি বাবার পাশেই ঘুমিয়েছিলাম
আমাকে কেউ ডাকেনি।
তখন খুব জ্বর বাবার।
মাথায় জলের ধারা দিতে দিতে মা গাইছিল,
একা মোর গানের তরী...
মা কী করে জানতো! আমি তো তখন ছোট
আমি তো তখন ঘুমে।
দুপুরেই বাবা পাশ ফিরতে ফিরতে চলে গেল,
শুধু ঠোঁট নেড়ে বলেছিল, আগুনের পরশমণি..
আমার বাবা কে জি বি ছিল
আমার বাবা সি পি আই ছিল
ঘাটকাজের পর গীতবিতানের প্রথম খন্ডে উপুড় হয়ে পড়ি
৯৪ পৃষ্ঠায় ২১২ নম্বর গানটা নেই।

উঠোনে তখন অনেক লোক থৈ থৈ করছে লোক ঘরে-বারান্দায়।
যাত্রা শুরুর মুহূর্তে শিশিরজেঠু বলেছিল, হরিধ্বনি দিও না কেউ।
তবে কি মা।
মা তখন ওই ৯৪ পৃষ্ঠার ২১২ নম্বর গানটা আগুনের পরশমণি বাবার ঠান্ডা হাতের মধ্যে
রেখে দিতে দিতে বলেছিলো, আমার তো কোনও ঠাকুর নেই
তুমি ওকে দেখো রবিঠাকুর।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:০১ PM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: রূপক চক্রবর্তী

মৃতসঞ্জীবনী - ভাস্কর চক্রবর্তী

যদি ভালোবাসা, প্রিয়, আমাকে বাঁচাতে পারে বাঁচবো তাহলে-
খসে পড়া তারাগুলো নাহলে আমাকে নিয়ে
মৃত তারাদের দেশে চলে যাবে-
সেখানে সমাধি হবে আমারও বা
লেখা হবে, আজব বিচিত্র এক নীল তারা, চশমাধারী প্রজাপতি,
এখানে ঘুমোচ্ছে সারা জীবনের ঘুমে,
যে তারাটি একা একা ছাতে বসে বুঝতে চেয়েছিল
ভালোবাসা আজো কেন বিক্রি হবে চড়া দামে
ভালোবাসা, রাজারহাটের তিন বেডরুমের মোলায়েম ফ্ল্যাট নাকি কোনো?
শাদা কোনো টাটা সুমো?
হলুদ বালিতে যায় ভরে যায় দেশ-বিদেশ, যাকে তোমরা
মরুভূমি বলো
সে মরুবালিও পথ শুঁকে শুঁকে এসে গেছে আমাদের ঘরে
এসো তুমি ধবধবে বিছানায় দুঘন্টায় ধন্য হও পথের কুটীরে
তিন গ্লাস স্বাধীনতা সঙ্গে পাবে
শুধু তুমি, এখনো কেন যে ভাবো, ভালোবাসা
ভালোবাসা মৃতসঞ্জীবনী
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:০০ PM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: ভাস্কর চক্রবর্তী

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? -শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।

এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়

যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?

সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:৫২ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: শক্তি চট্টোপাধ্যায়

সব হবে -শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ভালোবাসা সবই খায় - এঁটো পাতা, হেমন্তের খড়
রুগ্ন বাগানের কোণে পড়ে থাকা লতার শেকড়
সবই খায়, খায় না আমাকে
এবং হাঁ করে রোজ আমারই সন্মুখে বসে থাকে।

আমি একটু একটু করে তাকে অবসন্ন হাওয়া দিতে পারি
একটু এনে দিতে পারি আমরুলের পাতার প্রকৃতি
স্মৃতির কাঁথায় তার স্পর্শ - যিনি উপস্থিত নেই
এইসব - দিতে পারি, এতে কি শ্রীমুখ ফেরাবে?

আমার ভিতরে কোনো গোলযোগ নেই, প্রেম নেই
অন্যমনস্কতা লেগে আমার ভিতরে হয়ে হয়ে নেই
কিছু বা পাথর, নেই ফুটোফাটা, ফেলে রাখা ধুলো
আমার ভিতরে আছে সর্বাঙ্গে রঙীন পথগুলো

এতে সবই হবে।
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:৫০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: শক্তি চট্টোপাধ্যায়

গোলাপ সুন্দরী পড়ে -পূর্ণেন্দু পত্রী

তোমাদের মনে হতে পারে ছেলেখেলা, ইয়ার্কি-ফাজলেমির নশ্বরতাও হয়তো বা,
কিন্তু এই বুদবুদগুলো প্রকৃতপক্ষে আমার নিজস্ব অহঙ্কার।
বাতাস, যে কোন ওড়াউড়িময় সৃষ্টির সম্পর্কে বিরুদ্ধতার জন্যে যে বিখ্যাত,
সরাসরি তার সঙ্গে এক গোপন পাঞ্জার লড়াইও বলতে পারো এটাকে।
সেই কারণেই আমার হাতের এনামেল বাটিতে সাবান জল
আর এখন আমি এই পাহাড়-সদৃশ হাসপাতালের খৃষ্টপূর্ব প্রাচীণতার সামনে
যার খোপে খোপে মৃত্যুর শৈশবের দিকে
শৈশবের মৃত্যুর দিকে যবনিকহীন যাতায়াত।
এই বুদবুদগুলো শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছবে আমার জানা নেই
কিন্তু এদের উদ্দেশ্য এবং উপকারিতা সম্বন্ধে আমি
শতকরা নিরানব্বই ভাগ সজাগ।
এই রঙীন অহংকারময় খেলাটি আমি আশ্চর্যভাবে শিখে যায় বাল্যকালে
বাল্যকালের পক্ষে যেসব গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস-ছবি এবং গান অপরাধমূলক
তার প্রত্যেকটির মধ্যেই আমি দেখতে পাই এই সাবান জল
আর সাবান জলের উপরে ঝুঁকে পড়া সেই সব মানুষদের
যাদের ক্ষতবিক্ষত মুখের ভাস্কর্য-রেখার উপরে, সমকালীন নয়,
ভবিষ্যত্ শতাব্দীর সূর্যরশ্মি অভ্যর্থনার আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত।
বস্তুত এই সাবানজল আমি পেয়ে গেছি একপ্রকার উত্তরাধিকার সূত্রেই
এখনকার বুদবুদগুলো শুধু আমার।

ভ্রাম্যমান অক্ষর!
যাও, আকাশে একটা নতুন এলাচ-গন্ধের দ্বীপ গড়ে এসো।
ভ্রাম্যমান অক্ষর!
ঐ নিশ্বাসহীন যুবকটিকে বলে এসো আকাঙ্খারই অন্য নাম জীবন।
ভ্রাম্যমান অক্ষর!
অসহ্য রক্তপ্রবাহের পিছনে যে বিশ্বাসঘাতক অস্ত্র
তাকে জানিয়ে দাও একদিন এর প্রতিশোধ নেবে
যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর সব গোলাপ
সারাবেলা এই আমার অস্তিত্বে সবচেয়ে প্রিয় খেলা।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:৩৩ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: পূর্ণেন্দু পত্রী

স্নান - জয় গোস্বামী

সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার -
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …

জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।

আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?

শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৼস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।

দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত -
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:২৯ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জয় গোস্বামী

অবনী বাড়ি আছো -শক্তি চট্টোপাধ্যায়

অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:১৬ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: শক্তি চট্টোপাধ্যায়

মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস -মহাদেব সাহা

কেউ জানেনা একেকেটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষন্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস যেন একখানি অন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!
পাতায় পাতায় চোখের জল সেখানে লিপিবদ্ধ
আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট;
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস, এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!

দীর্ঘশ্বাসভরা এই বুকের চেয়ে শীতপ্রধান বিপন্ন অঞ্চল আর কোথাও নেই,
এমন হলুদ, ধূসর আর তুষারবৃত!
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়ায়, কেউ জানে না
হঠাৎ একসঙ্গে অসংখ দুঃখ যদি কখনো কেঁদে ওঠে কিংবা যদি
প্রাচীন শিলালিপি থেকে সব শোকের গান সশব্দে বেজে যায়,
তাহলে যেমন মধ্যাহ্নের আকাশ সহসা দুঃখে ম্লান হয়ে যাবে
গোলাপ হবে কৃষ্ণবর্ণ, তার চেয়েও বিষন্নতা নেমে আসবে
মানুষের বুক থেকে এই দীর্ঘশ্বাস যদি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে।

তেমন সম্ভাবনা আছে বলেই মানুষ বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখে
তার চোখে নিয়তই জল ঝরে তবু দেখা যায় না;

মানুষের ভেতর কতো যে দীর্ঘশ্বাস, জমাট বেঁধে আছে
কতো যে ক্রন্দন, পাতা ঝরার শব্দ, মৃত্যুসংবাদ
মানুষের বুকের মধ্যে ব্যথিত ব্যাকুল ইতিহাস আর আহত সভ্যতা
মেঘের মতো ঘনীভূত হতে হতে একেকটি মর্মান্তিক দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে
মানুষ তাকে বয়ে বয়ে দগ্ধ বেঁচে থাকে;
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়, কেউ জানে না
একেকটি মানুষ নিজের মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়, হায়, কেউ জানে না!

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:০৯ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: মহাদেব সাহা

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

প্রমিথি -খোন্দকার আশরাফ হোসেন

কতবার জাহান্নামের আগুনে পোড়াতে চেয়েছ আমাকে
কতবার বুরুজ পর্বত থেকে ঝুলিয়ে রেখেছ
তোমার তরবারি
কত দিন ক্ষুধার্ত উদর নিয়ে কেঁদে কেঁদে
রাত করেছি কাবার
কত লক্ষ বছরের পাথর ঠেলেছি
পাহাড়ের ঢাল ঠেলে কেবলই উজানে
কতবার তোমার ইগল এসে ঠুকরে ঠুকরে
খেয়েছে নাড়িভুঁড়ি

তোমাকে দেখেছি অলিম্পাসের তুষারধবল
চূড়ার মহিমায়
তুমি ধরে আছ দুই হাতে বজ্র আর অশনির চাবুক
তুমি সেমিলির ঘরে যখন স্বর্ণবৃষ্টি
হয়ে নেমেছিলে, অপার তৃষ্ণায়
তোমার প্রেমের দান ভেবে ঘরে নিয়ে-
ছিলাম আগুন।

তোমার কাছে চেয়েছিলাম জীবনজিজ্ঞাসার উত্তর
তুমি আকাশ থেকে ভয়াল শব্দে ছুড়ে দিলে
দুইখণ্ড পাথর
দশটি নিষেধ দিলে, চেয়েছিলাম পিপাসার জল
রক্তের কম্বল দিলে, চেয়েছিলাম মিলনের হাত
তীব্র দ্রংষ্ট্রার ঘায়ে আমাকে ঝুলিয়ে রাখলে-
দুই পাশে দুজন তস্কর!

গ্যালিলির জলে রক্তমাখা হাত ধুয়ে নিয়ে
তোমার স্তোত্র পড়তে বসেছি খড়ের আগুনের আলোয়
তখন পূর্বাকাশে মন্দিরা বাজাচ্ছিল কার দুটি মোহন হাত
কেউ কেউ তোমার নাম করে গালমন্দ করতে করতে
পাহাড়ে ঢুকে গিয়েছিল, আর ফেরেনি
দুটি শহর আগুনে ছাই হলে পর স্বনিযুক্ত পরিত্রাতারা
তোমার নামের জয়ধ্বনি দিচ্ছিল দশ দিগন্তে
আমি তোমার নাম জিহ্বার অগ্রভাগে এনে
ছুড়ে দিলাম নিষ্ঠীবনের সাথে
আমাকে ক্ষমা করার কোনো অবকাশ তোমাকে দেব না
বলে গর্জমান মানুষের স্রোতে মিশে গেলাম
কেননা মানুষের গায়ের গন্ধ তখন আমার কাছে
পারিজাত কুসুমের চেয়েও আকর্ষণীয়

তোমার ইগলেরা জানি আজও আমাকে খুঁজছে।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:৩০ PM কোন মন্তব্য নেই:

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় -হেলাল হাফিজ

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।

১.২.৬৯

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:২৪ PM 1 টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: হেলাল হাফিজ

একটি পতাকা পেলে - হেলাল হাফিজ

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

১৩.১২.৮০

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:২১ PM 1 টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: হেলাল হাফিজ

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো - নির্মলেন্দু গুণ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’
‘কখন আসবে কবি?’

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:১৭ PM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: নির্মলেন্দু গুণ

হুলিয়া -নির্মলেন্দু গুণ

আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷

কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷

বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷

আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া৷
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷

পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু’জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷

পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে – -৷
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,— “মা’৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷

মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু’ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷

মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
– আমাদের ভবিষ্যত্ কী?
– আইয়ুব খান এখন কোথায়?
– শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
– আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?

আমি কিছুই বলবো না৷
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে
কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
‘আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷’

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:০৬ PM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: নির্মলেন্দু গুণ

নিঃসঙ্গ কবি, নির্জন রেস্তোরাঁ -সৈয়দ শামসুল হক

নিঃসঙ্গ কবি, নির্জন রেস্তোরাঁ
সৈয়দ শামসুল হক

মাথার ভেতরে লেখা। অদূরে রেস্তোরাঁ।
আষাঢ় সেজেছে খুব মেঘে মেঘে-মনে সে করাবে
বিরহ বিপন্ন দিন-রাস্তাঘাট আদ্যোপান্ত খোঁড়া।
মাটির পাহাড়গুলো কতদিনে কে জানে সরাবে!

এরই মধ্যে পথ করে নিতে হবে আজ।
অপেক্ষায় কবিতা ও কফি।
হঠাৎ বৃষ্টির শুরু, ধমকাল বাজ।
পিছলে পা পড়ে গেল কবি।

সমস্ত শরীরে কাদা। এভাবে কি যাওয়া যেতে পারে?
বিমূঢ় দাঁড়িয়ে থেকে কেটে যায় কাল।
তবুও কি প্রেম কিছু ছাড়ে?
বিরহেও রয়েছে বহাল!

যদিও পিছল পথ, জামা কাদা লেপা।
হেঁটে চলো, হেঁটে চলো, দাঁড়িয়ে থেকো না।
সময় যতই হোক বিরুদ্ধ বা খেপা-
কবিতাকে ঠেকিয়ে রেখো না।

কবিতা কি থেমে থাকবার!
দুর্গতির একশেষ, খাতা তবু শক্ত হাতে ধরা।
হাতছানি দেয় কফি, আলো রেস্তোরাঁর,
দুধের বদলে ্নৃতি, কালো কফি, শব্দের শর্করা ু

২
বৃষ্টিভেজা গন্ধ ছড়ায় ফুলদানিতে ফুল।
ঘটিয়ে দেয় ইন্দ্রজাল রাতের রেস্তোরাঁয়।
একলা বুকে আছড়ে পড়ে ও কার খোলা চুল।
আষাঢ় এলে পদ্মা পাগল-পেলেই ভূমি খায়!

আগুন ওঠে দপদপিয়ে, লাফাতে চায় খাড়া-
ভোলা তো খুব সহজ নয় চিরে ফেলার ধাঁচ।
অতীতও নয় গেছেন কবি নক্ষত্রের পাড়া,
সেদিন কবি জেনেছিলেন স্বর্গীয় তার আঁচ।

ফুলের সাথে চুলের গন্ধ এখন একাকার।
এখন শুধু গন্ধটুকুই-এবং অন্ধকার ু

৩
কফির গরম গন্ধ। পেয়ালায় আঁকা দুটি ফুল
দীর্ঘ দুটি বৃন্তে তারা পরস্পর জড়িয়ে রয়েছে।
কত দীর্ঘদিন কবি রেস্তোরাঁয় এসেছে ও
একাকী সহেছে
বিরহ বিচ্ছেদ তার। আষাঢ়ের বৃষ্টিপাত হয়েছে তুমুল।

কবিতার খাতাটি পাশেই।
রেস্তোরাঁয় একা কবি চুমুকে চুমুকে
পান করে চলে কফি।
পৃথিবী বিপুল আর লেখার বিষয় তার
হতে পারে সবই।
কিন্তু আজ সেই মুখ-একটি সে মুখ ছাড়া
আর কিছু নেই।

ভোরের প্রথম আলো প্রতি ভোরে পড়ে সেই মুখে।
ফুরোয় না ভালোবাসা-কফি শেষ হয়ে যায়
চুমুকে চুমুকে

৪
সে নেই, তবুও কবি আসে রেস্তোরাঁয়।
ধীরে কালো কফি ঢালে শাদা পেয়ালায়।
এই সে চেয়ার আর এই সে টেবিল।
জানালার পর্দা ওড়ে এখনো তো নীল।
শূন্যতার রং শাদা, মৃত্যু ঘন কালো।
যা ছিল জীবনব্যাপী-মুহূর্তে মিলাল।

এখনো টেবিলে ফুল-ছাইদান পড়ে।
কেবল সে নেই আর। ্নৃতি হয়ে ওড়ে
ছাইদানে ছাই আজ করুণ বাতাসে।
রেস্তোরাঁয় সেদিনের ফুলগন্ধ ভাসে।
স্মৃতির নদীতে নেভা আলোর বিকন।
কালির কলমে লেখা জলের লিখন

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১২:০২ PM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: সৈয়দ শামসুল হক

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

আসাদের শার্ট - শামসুর রাহমান


এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:৪০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: শামসুর রাহমান

মন ভালো নেই - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না
সকলি গোপন
মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু
চোখ বুজে আছি
কে তা দেখেনি
প্রতিদিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

এখন আমার
ওষ্ঠে লাগে না
কোনো প্রিয় স্বাদ
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমন কি সুরা এমন কি ভাষা

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
বিকেল বেলায়
একলা একলা
পথে ঘুরে ঘুরে
একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে

কিছুই খুঁজি না
কোথাও যাই না
কাউকে চাইনি
কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না
আমিও মানুষ
আমার কী আছে
অথবা কী ছিল
আমার কী আছে অথবা কী ছিল
ফুলের ভিতরে
বীজের ভিতরে
ঘুণের ভিতরে
যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
তবু দিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:৩১ AM 1 টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ

পরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)

আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়িরে ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পার। নিখিলেশ, তুই একে
কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেকেরে
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা;
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে
জীবনবদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একি নদীর তরঙ্গে
ছেলেবেলার মতো ডুব সাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই,
আমার ঘরের
দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি ….., ব্যক্তিগত জিরো আওয়অর;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাত্‌ড়ে
টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায়
আছে অদুরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য
পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:২৪ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

হায় চিল -জীবনানন্দ দাস

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে।
পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ৯:২২ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

পদ্মার প্রতি -সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

হে পদ্মা! প্রলয়ংকরী! হে ভীষণা! ভৈরবী সুন্দরী!
হে প্রগলভা! হে প্রবলা! সমুদ্রের যোগ্য সহচরী
তুমি শুধু, নিবিড় আগ্রহ আর পার গো সহিতে
একা তুমি সাগরের প্রিয়তমা, অয়ি দুবিনীতে!

দিগন্ত বিস্তৃত তোমার হাস্যের কল্লোল তারি মত
চলিয়াছে তরঙ্গিয়া, - চির দৃপ্ত, চির অব্যাহত|
দুর্নমিত, অসংযত, গূঢ়চারী, গহন গম্ভীর;
সীমাহীন অবজ্ঞায় ভাঙিয়া চলেছ উভতীর |

রুদ্র সমুদ্রের মত, সমুদ্রেরি মত সমুদার
তোমার বদরহস্ত বিতরিছে ঐশ্বর্যসম্ভার|
উর্বর করিছ মহি, বহিতেছ বাণিজ্যের তরী
গ্রাসিয়া নগর গ্রাম হাসিতেছ দশদিক ভরি|

অন্তহীন মূর্ছনায় আন্দোলিত আকাশ সংগীতে, -
ঝঙ্কারিয়া রুদ্রবীণা, মিলাইছ ভৈরবে ললিতে
প্রসন্ন কখনো তুমি, কভু তুমি একান্ত নিষ্ঠুর;
দুর্বোধ, দুর্গম হায়, চিরদিন দুর্জ্ঞেয় সুদূর!

শিশুকাল হতে তুমি উচ্ছৃঙ্খল, দুরন্ত দুর্বার;
সগর রাজার ভস্ম করিয়ে স্পর্শ একবার!
স্বর্গ হতে অবতরি ধেয়ে চলে এলে এলোকেশে,
কিরাত-পুলিন্দ-পুণ্ড্র অনাচারী অন্ত্যজের দেশে!

বিস্ময়ে বিহ্বল-চিত্ত ভগীরথ ভগ্ন মনোরথ
বৃথা বাজাইল শঙ্খ, নিলে বেছে তুমি নিজ পথ;
আর্যের নৈবেদ্য, বলি, তুচ্ছ করি হে বিদ্রোহী নদী!
অনাহুত-অনার্যের ঘরে গিয়ে আছ সে অবধি|

সেই হকে আছ তুমি সমস্যার মত লোক-মাঝে,
ব্যাপৃত সহস্র ভুজ বিপর্যয় প্রলয়ের কাজে!
দম্ভ যবে মূর্তি ধরি স্তম্ভ ও গম্ বুজে দিনরাত
অভ্রভেদী হয়ে ওঠে, তুমি না দেখাও পক্ষপাত|

তার প্রতি কোনদিন, সিন্ধুসঙ্গী, হে সাম্যবাদিনী!
মূর্খে বলে কীতিনাশা, হে কোপনা কল্লোলনাদিনী!
ধনী দীনে একাসনে বসায়ে রেখেছ তব তীরে,
সতত সতর্ক তারা অনিশ্চিত পাতার কুটিরে;

না জানে সুপ্তির স্বাদ, জড়তার বারতা না জানে,
ভাঙ্গনের মুখে বসি গাহে গান প্লাবনের তানে,
নাহিক বস্তুর মায়া, মরিতে প্রস্তুত চির দিনই!
অয়ি স্বাতন্ত্রের ধারা! অয়ি পদ্মা! অয়ি বিপ্লাবনী!

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ৯:১৯ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

বিদ্রোহী - কাজী নজরুল ইসলাম


বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন "আরশ" ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর -
চির উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি' ছমকি'
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উদ্দাম, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ,
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম্
ভরপুর মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর -
চির উন্নত মম শির।

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, - আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, - কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধাতার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত
বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক'রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা'র কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! -
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!

আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আণি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি' ভূমি-কম্প!
ধরি বাসুকির ফনা জাপটি', -
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি'!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরী তানে পাশরি'
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে' যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা -
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!!
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ৬:০০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: কাজী নজরুল ইসলাম

প্রিয়তমাসু -সুকান্ত ভট্টাচার্য

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক'রে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়।

দূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
- ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।

আজ দেহে আমার সৈনিকের কড়া পোশাক,
হাতে এখনো দুর্জয় রাইফেল,
রক্তে রক্তে তরঙ্গিত জয়ের আর শক্তির দুর্বহ দম্ভ,
আজ এখন সীমান্তের প্রহরী আমি।
আজ নীল আকাশ আমাকে পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ,
স্বদেশের হাওয়া বয়ে এনেছে অনুরোধ,
চোখের সামনে খুলে ধরেছে সবুজ চিঠিঃ
কিছুতেই বুঝি না কী ক'রে এড়াব তাকে?
কী ক'রে এড়াব এই সৈনিকের কড়া পোশাক?
যুদ্ধ শেষ। মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি,
চোখে এসে লাগছে তারই শীতল হাওয়া,
প্রতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে আসে হাতের রাইফেল,
গা থেকে খসে পড়তে চায় এই কড়া পোশাক,
রাত্রে চাঁদ ওঠেঃ আমার চোখে ঘুম নেই।

তোমাকে ভেবেছি কতদিন,
কত শত্রুর পদক্ষেপ শোনার প্রতীক্ষার অবসরে,
কত গোলা ফাটার মুহূর্তে।
কতবার অবাধ্য হয়েছে মন, যুদ্ধজয়ের ফাঁকে ফাঁকে
কতবার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনার অঙ্গারে
তোমার আর তোমাদের ভাবনায়।
তোমাকে ফেলে এসেছি দারিদ্র্যের মধ্যে
ছুঁড়ে দিয়েছি দুর্ভিক্ষের আগুনে,
ঝড়ে আর বন্যায়, মারী আর মড়কের দুঃসহ আঘাতে
বাব বার বিপন্ন হয়েছে তোমাদের অস্তিত্ব।
আর আমি ছুটে গেছি এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধক্ষেত্র।
জানি না আজো, আছ কি নেই,
দুর্ভিক্ষে ফাঁকা আর বন্যায় তলিয়ে গেছে কিনা ভিটে
জানি না তাও।

তবু লিখছি তোমাকে আজঃ লিখছি আত্মম্ভর আশায়
ঘরে ফেরার সময় এসে গেছে।
জানি, আমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা ক'রে নেই
মালায় আর পতাকায়, প্রদীপে আর মঙ্গলঘটে;
জানি, সম্বর্ধনা রটবে না লোক মুখে,
মিলিত খুসিতে মিলবে না বীরত্বের পুরস্কার।
তবু, একটি হৃদয় নেচে উঠবে আমার আবির্ভাবে
সে তোমার হৃদয়।
যুদ্ধ চাই না আর, যুদ্ধ তো থেমে গেছে;
পদার্পণ করতে চায় না মন ইন্দোনেশিয়ায়
আর সামনে নয়,
এবার পেছনে ফেরার পালা।

পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক,
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে।
প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক'রে পেলাম কী? উত্তর তার-
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়,
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব,
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র;
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা।

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
সে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।।

(কাব্যগ্রন্থঃ ঘুমনেই)

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ৫:৫৫ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: সুকান্ত ভট্টাচার্য

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

আকাশলীনা - জীবনানন্দ দাস

সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে - আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।

কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস -
আকাশের ওপারে আকাশ।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:২৩ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাস

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:২০ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

বাংলার মুখ - জীবনানন্দ দাস

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি - চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে -
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় -
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল - একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:১৫ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

আবার আসিব ফিরে - জীবনানন্দ দাস

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে - এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো - কিশোরীর - ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় - রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।
এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১১:১১ AM কোন মন্তব্য নেই:
লেবেলসমূহ: জীবনানন্দ দাস

যদি নির্বাসন দাও - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্তে নির্মিশেষ--
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভুমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!
ধান ক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এই খানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রনাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘোরে
লুটেরা, ফেরারী!
শহরে বন্দরে এত অগ্নিবৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক-একটি অপরুপ ভোর,
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরষতার মেলা
বুলেট ও বিস্ফোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল--
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভুমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দিঘির পারে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?
আমি কি দেখিনি কোনো মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলার ওড়াউড়ি
মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রান
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ্ণ স্বর?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ.....
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভুমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!


এর দ্বারা পোস্ট করা চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। এই সময়ে ১০:৫৭ AM ২টি মন্তব্য:
লেবেলসমূহ: সুনীল গঙ্গোপধ্যায়
নবীনতর পোস্টসমূহ হোম
এতে সদস্যতা: পোস্টগুলি (Atom)

কবি নাম

  • কাজী নজরুল ইসলাম (1)
  • জয় গোস্বামী (1)
  • জীবনানন্দ দাস (16)
  • নির্মলেন্দু গুণ (2)
  • পূর্ণেন্দু পত্রী (1)
  • ভাস্কর চক্রবর্তী (1)
  • মহাদেব সাহা (1)
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (3)
  • রূপক চক্রবর্তী (1)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায় (4)
  • শামসুর রাহমান (1)
  • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (1)
  • সুকান্ত ভট্টাচার্য (1)
  • সুনীল গঙ্গোপধ্যায় (3)
  • সৈয়দ শামসুল হক (1)
  • হেলাল হাফিজ (2)

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • ▼  2009 (41)
    • ►  অক্টোবর (3)
    • ▼  সেপ্টেম্বর (38)
      • অস্তচাঁদে - জীবনানন্দ দাস
      • অন্ধকার - জীবনানন্দ দাস
      • সুদর্শনা - জীবনানন্দ দাস
      • সুরঞ্জনা - জীবনানন্দ দাস
      • কুড়ি বছর পরে - জীবনানন্দ দাস
      • হায় পাখি, একদিন কালীদহে ছিল না কি - জীবনানন্দ দাস
      • বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি - জীবনানন্দ দাস
      • আবার আসিব ফিরে - জীবনানন্দ দাস
      • অদ্ভুত আঁধার এক - জীবনানন্দ দাস
      • বোধ - জীবনানন্দ দাস
      • পঁচিশ বছর পরে (মাঠের গল্প) - জীবনানন্দ দাস
      • যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? - শক্তি চট্টোপাধ্যায়
      • পঁচিশে বৈশাখ - রূপক চক্রবর্তী
      • মৃতসঞ্জীবনী - ভাস্কর চক্রবর্তী
      • যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? -শক্তি চট্টোপাধ্যায়
      • সব হবে -শক্তি চট্টোপাধ্যায়
      • গোলাপ সুন্দরী পড়ে -পূর্ণেন্দু পত্রী
      • স্নান - জয় গোস্বামী
      • অবনী বাড়ি আছো -শক্তি চট্টোপাধ্যায়
      • মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস -মহাদেব সাহা
      • প্রমিথি -খোন্দকার আশরাফ হোসেন
      • নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় -হেলাল হাফিজ
      • একটি পতাকা পেলে - হেলাল হাফিজ
      • স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো - নির্মলেন...
      • হুলিয়া -নির্মলেন্দু গুণ
      • নিঃসঙ্গ কবি, নির্জন রেস্তোরাঁ -সৈয়দ শামসুল হক
      • আসাদের শার্ট - শামসুর রাহমান
      • মন ভালো নেই - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়
      • আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়
      • হায় চিল -জীবনানন্দ দাস
      • পদ্মার প্রতি -সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
      • বিদ্রোহী - কাজী নজরুল ইসলাম
      • প্রিয়তমাসু -সুকান্ত ভট্টাচার্য
      • আকাশলীনা - জীবনানন্দ দাস
      • বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাস
      • বাংলার মুখ - জীবনানন্দ দাস
      • আবার আসিব ফিরে - জীবনানন্দ দাস
      • যদি নির্বাসন দাও - সুনীল গঙ্গোপধ্যায়

আমার সম্পর্কে

চোখ কেড়েছে চোখ উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

এতে সদস্যতা

পোস্টগুলি
Atom
পোস্টগুলি
সব কটি মন্তব্য
Atom
সব কটি মন্তব্য